Estd. 2006
Freedom and security of Bangladesh news media eroding

A comprehensive report on Bangladesh’s fragile news media

To translate in English use https://translate.google.co.in/?sl=auto&tl=en&op=translate

Please note that digital translation may not give the exact meaning of the report made in Bangla.

 

                                                                                           বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর নৈরাজ্য গণমাধ্যমের সংকট

 

২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যেখানে দেশের সাংবাদিক সমাজের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ক্রমশ বিলীন হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫ই আগস্ট ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ এবং ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর গণমাধ্যমে নজিরবিহীন নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। ক্ষমতার হস্তান্তরের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনিক ও রাষ্ট্রসংগঠিত পদক্ষেপের মাধ্যমে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। 

সরাসরি রিপোর্ট অনুসারে, এই সময়ে বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেল, দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের ওপর প্রচণ্ড নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। সাংবাদিকদের ওপর হামলা, নির্যাতন, গ্রেফতার এবং বিনা বিচারের কারাবাসের ঘটনা বেড়ে যায়। অনেক সাংবাদিক বাধ্য হয়ে ইউরোপ, কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হন। অন্যরা দেশে আত্মগোপনে যান, রিপোর্টিং কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।

সচিবালয়ে সাংবাদিক অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে ২০২৪ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ১৬৭ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল করা হয়। এতে প্রভাবিত সাংবাদিকরা মূলত দৈনিক ও টেলিভিশন মিডিয়ার সিনিয়র ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা RSF ও CPJ এই পদক্ষেপকে গণমাধ্যম স্বাধীনতার প্রতি হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছে। প্রেসকার্ড বাতিলের ফলে সাংবাদিকরা সরকারি অফিস ও মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করতে অক্ষম হন, যা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

মিডিয়া হাউস দখল ও সাংবাদিক নির্যাতন

২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের চলতি সময় পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনুসারীরা ৩টি প্রধান টেলিভিশন চ্যানেল এবং ৪টি দৈনিক পত্রিকার অফিস দখল করে নিয়েছে। ৭১ টেলিভিশনের হেড অফ নিউজ মোজাম্মেল বাবু এবং সিনিয়র সাংবাদিক ফারজানা রূপা বিনা বিচারে প্রায় এক বছর ধরে কারাগারে আটক। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এটিকে সাংবাদিক সমাজের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের দখল ও সদস্যপদ স্থগিত

জাতীয় প্রেস ক্লাবের বর্তমান দখলদার কমিটি কথিতভাবে কবি হাসান হাফিজ, ফটোগ্রাফার কেএম মহসিন, কাদের গণী চৌধুরী-এর নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। ২০২৪ সালের আগস্টের পর প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কক্ষ দখল করা হয়। পরে ৩৭ জন সদস্যের সদস্যপদ স্থগিত করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে আরও ১৭ জনের সদস্যপদ স্থগিত হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এই ঘটনাকে “মিডিয়ার ওপর রাষ্ট্রসংগঠিত নিয়ন্ত্রণের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ” হিসেবে বর্ণনা করেছে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে আগুন ও ভাঙচুর

৫ই আগস্ট ২০২৪, সন্ধ্যা: দুর্বৃত্তরা ঢুকে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন অফিসে মূল কাগজপত্র ও ফাইল জ্বালিয়ে দেয়, কম্পিউটার, চেয়ার, টেবিল ভাঙচুর করে এবং অফিসে তালা দিয়ে দেয়। প্রায় ৩,০০০ সদস্যের DUJ কার্যত অচল হয়ে যায়। ড. ইউনুস এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের দখলদার কমিটিকে আবেদন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড ও নিরাপত্তাহীনতা

২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ পর্যন্ত অন্তত ৫ জন সাংবাদিক সন্ত্রাসী হামলায় নিহত এবং লাশ নদীতে বা বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। ৮–১০ জন সাংবাদিক গুরুতর আহত বা হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা Amnesty International ও Human Rights Watch এই হত্যাকাণ্ড ও হামলার ঘটনা রেকর্ড করেছে।

মিথ্যা মামলা ও আত্মগোপন

প্রায় ২৯০ জন সাংবাদিকের নামে মিথ্যা হত্যা মামলা ঝুলছে, যা জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিতর থেকে কথিতভাবে হাসান হাফিজ, কেএম মহসিন ও কাদের গণী চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি ষড়যন্ত্রকারী গ্রুপ তৈরি করেছে। এই গ্রুপ সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলার নীল নকশা ও তালিকা সরবরাহ করেছে। এই ভয়ের কারণে সাংবাদিকদের বড় একটি অংশ দেশের বাইরে চলে গেছে এবং অনেকে দেশে আত্মগোপনে রয়েছে।

 

উল্লেখযোগ্য সাংবাদিকরা যারা আত্মগোপনে রয়েছেন বা বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন:

অবজারভার সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ স্থগিত।

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে অসংখ্য মামলা। বাতিল করা হয়েছে জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ। জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য পদে স্থগিত।

জাতীয় প্রেসক্লাবের বারবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের নামে দেয়া হয়েছে অসংখ্য মিথ্যা মামলা।

৬ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের রুমের তালা ভেঙ্গে মূল্যবান কাগজপত্র ও অর্থ লুৎপাট করে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক একের পর এক হত্যা মামলার আসামি। জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য পদে স্থগিত।

বিএফইউজে সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল। একের পর এক হত্যা মামলার আসামি। জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত I

বিএফইউজে সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভূঁইয়া । হত্যা মামলার আসামি করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে।

ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন । হত্যা মামলার আসামি করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে।

ডিইউজের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম। একের পর এক হত্যা মামলার আসামি করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে।

 

বিনা বিচারের কারাবন্দী ও নিরাপত্তাহীন সাংবাদিক

সাংবাদিকরা শুধুমাত্র গ্রেফতারই নয়, বরং নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বরা:

শ্যামল দত্ত – জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, বিনা বিচারে জেলখানায় আটক।

মনজুরুল আলম পান্না – রিপোর্টার্স ইউনিটির এক সেমিনার থেকে আটক।

শেখ জামাল – রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, মিথ্যা হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন জেলখানায় আটক; জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরও নিরাপত্তাহীন।

মোজাম্মেল বাবু – ৭১ টেলিভিশনের হেড অফ নিউজ, প্রায় এক বছর বিনা বিচারে কারাগারে।

ফারজানা রূপা শাকিল আহমেদ – ৭১ টেলিভিশন, দীর্ঘ সময় বিনা বিচারে আটক।

 

ভারতের মিডিয়ায় বাংলাদেশ থেকে সংবাদ পাঠানো সাংবাদিকরাও ভয়াবহ হুমকির মুখে রয়েছেন:

আনন্দবাজারের প্রাক্তন রিপোর্টার ও ভারত বাংলাদেশ করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ–  হত্যা মামলার আসামি ।

ভারত-বাংলাদেশ করসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক এপি ব্যুরো চিফ ফরিদ হোসেন – মিথ্যা মামলা।

জুলহাস আলম (এপি রিপোর্টার) এর এক্রিড্রিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে

ভারতের ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকার ঢাকা প্রতিনিধি শহিদুল হাসান খোকনের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে অসংখ্য মামলা। ভারত বিদ্বেষী মনোভাবের কারণ থেকেই এটি করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।

ভারতের টেলিভিশন নিউজ লাইভ বাংলা-এর বাংলাদেশ ব্যুরো চিফ জাহাঙ্গীর খান বাবু – জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত।

বর্তমানে এই ছয় রিপোর্টার প্রায় আত্মগোপনে রয়েছেন।

 

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট

Reporters Without Borders (RSF): “বাংলাদেশে সাংবাদিকরা এক অদ্ভুত দমনমূলক চক্রের শিকার হচ্ছেন।”

Amnesty International: “সাংবাদিকদের ওপর হামলা, গ্রেফতার ও বিনা বিচারের কারাবাস মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ।”

Human Rights Watch (HRW): বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে যে অবস্থা বিরাজ করছে, তা বিশ্বের ইতিহাসে এক ভয়াবহ নৈরাজ্যের মতো।

 

উপসংহার

২০২৪ সালের আগস্টের পর বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সমাজ এক অভূতপূর্ব সংকটের মুখোমুখি। সচিবালয় অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল, মিডিয়া হাউস দখল, প্রেস ক্লাব দখল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের অফিসে আগুন, বিনা বিচারে জেলবন্দী সম্পাদক ও সাংবাদিক, মিথ্যা মামলা, আত্মগোপন এবং নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতি সব মিলিয়ে দেশের গণমাধ্যম স্বাধীনতা কঠোর হুমকির মুখে।

 

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করে বলেছেন, দ্রুত ও সুষ্ঠু ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশের গণমাধ্যম স্বাধীনতা এবং সাংবাদিক সমাজের নিরাপত্তা আরও সংকটাপন্ন হবে।

 

Courtesy: Jahangir Khan Babu

Best viewing in Desktop / Laptop.

October 28, 2025